প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের সুবিশাল সমুদ্র, উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এসকল এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ, জনগণের জানমাল রক্ষা, চোরাচালান, মাদক ও মানব পাচার দমনের পাশাপাশি নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ ও উদ্ধার সহায়তা প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড মানুষের মাঝে নিরাপত্তা ও আস্থার বিশ্বস্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছে। কোস্ট গার্ড ঢাকা জোন ২ টি জাহাজ এবং উচ্চ গতি সম্পন্ন ২৩ টি বোটের মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া ও চাঁদপুর অঞ্চলে টহল প্রদান, জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিউআরএফ ও ডাইভিং টিম মোতায়েনসহ নৌপথে নিয়মিত পেট্রলিং এর মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে। গোয়েন্দা তৎপরতা এবং সার্বক্ষণিক টহল কার্য পরিচালনার মাধ্যমে গত চার মাসে (জানুয়ারি হতে এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত) অত্র জোনের তত্ত্বাবধানে ২৬ টি দেশীয় অস্ত্র, ১ টি বিদেশি পিস্তল, ১ টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড তাজা গোলা, ২৫ পিস ইয়াবা, ৬ কেজি ৫০ গ্রাম গাঁজা, ১২ জন কিশোরগ্যাং সদস্য, ৪ জন চাঁদাবাজ, ৩ জন ছিনতাইকারী এবং ১ জন দুস্কৃতিকারী কে আটক করা হয়েছে। যা ঐ সকল এলাকাবাসীর জানমালের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও, নিয়মিত মেডিক্যাল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দুর্গম চরাঞ্চলের চিকিৎসা বঞ্চিত হতদরিদ্র ১,৬৪৭ জন অধিবাসীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন প্রতিরোধকল্পে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৪৭ টি বাল্কহেড, ১২ টি ড্রেজার এবং ২ টি এস্কেভেটর জব্দ করা হয়েছে। “জাটকা নিধন প্রতিরোধ অভিযান ২০২৪” বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ জাল, ১,৫৬,৫৩০ কেজি জাটকা, ৪৪ টি বোট এবং ৫ টি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। ঢাকা জোনের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা তথা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একক ও যৌথ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে অত্র জোন কর্তৃক ১০ টি মৃতদেহ এবং ২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নৌ পথে চলাচলকারী যাত্রী ও নৌযানসমূহের নিরাপদে গন্তব্যে গমন এবং জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দিবা-রাত্র টহল এবং তল্লাশী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও নৌপথে আকস্মিক দূর্ঘটনায় সার্চ এন্ড রেসকিউ অপারেশনের জন্য অত্র জোনের অধীনস্থ বিসিজি স্টেশন পাগলা ও বিসিজি স্টেশন চাঁদপুরে সার্বক্ষণিক ডুবুরি দল প্রস্তুত রাখা হয়ে থাকে। চলতি বছরের শুরুতে আইনশৃঙ্খলা অবস্থার কিছুটা অবনতির প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকার পাশাপাশি মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত দিবা রাত্র বিশেষ নিরাপত্তা টহল চালু করা হয়েছে। ফলে বর্ণিত এলাকায় চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পূর্বের তুলনায় বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য নৌপথে পণ্য পরিবহণে ব্যবহৃত লাইটার/ কার্গো ভেসেল সমূহকে যেন গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সেক্ষেত্রে অত্র জোনের আওতাধীন নৌপথে চলাচলকারী ১,২৫৭ টি লাইটার/ কার্গো ভেসেল এ তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে । এছাড়াও খাদ্য দ্রব্যাদি যথাসময়ে খালাস করার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে নদী-পথে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং যাত্রীবাহী জলযানে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য দায়িত্বপূর্ণ এলাকার লঞ্চঘাট/ ফেরীঘাট/ পন্টুনে টহল সেকশন ও নদীতে সুবিধাজনক জলযান দ্বারা টহল পরিচালনা এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণা করা হয়েছে। এছাড়াও যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অত্র জোনের আওতাধীন নৌরুটের চেকপয়েন্টসমূহে নজরদারি অব্যাহত রাখা হচ্ছে।